প্রত্যয় নিউজডেস্ক: বৈশ্বিক মহামারির শুরু থেকেই কানাডার স্কুলগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পুনরায় চালু হয় সেপ্টেম্বর থেকে। শিক্ষার্থীদের নিরাপদে রাখতে ইতোমধ্যেই নানা পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটির সরকার। তবুও উদ্বেগ আরও উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়েই অভিভাবকরা সন্তানদের স্কুলে দিয়েছে।
ইতোমধ্যে করোনার কারণে টরন্টোতে প্রথম একটি স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। স্কারবোরোর ম্যাসন জুনিয়র পাবলিক স্কুলে শিক্ষার্থীসহ চারজন করোনা পজিটিভ হওয়ায় পুনরায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
সেপ্টেম্বর ২৮ থেকে অক্টোবর ২ পর্যন্ত স্কুলটি বন্ধ থাকবে বলে টরন্টো ডিস্ট্রিক্ট স্কুল বোর্ড (টিডিএসবি) রোববার এক টুইটে ঘোষণা দিয়েছে। স্কারবোরোর ৭৮ ম্যাসন রোডের এই স্কুলটি টরন্টোর প্রথম স্কুল যেটি কোভিডের কারণে বন্ধ ঘোষণা করা হলো।
তবে করোনা সংক্রমিত হওয়ার তালিকায় এটি হচ্ছে দ্বিতীয় স্কুল। এর আগে গ্লেন পার্ক স্কুলে সংক্রমণের ঘটনা ঘটে। ওই স্কুলে দুইজন শিক্ষার্থী পজিটিভ হিসেবে চিহ্নিত হয়। গ্লেন পার্ক স্কুল অবশ্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়নি। তবে আক্রান্ত দুই শিক্ষার্থীসহ ৩৫ জন কর্মচারী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী আইসোলেশনে রয়েছেন।
টিডিএসবি জানিয়েছে, ম্যাসন জুনিয়র স্কুলের একজন শিক্ষার্থী ও তিনজন কর্মী কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন বলে টরন্টো পাবলিক হেলথ নিশ্চিত করেছে।
অন্যদিকে টরন্টো ডিস্ট্রিক্ট স্কুল বোর্ড (টিডিএসবি) তাদের আওতাধীন বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের ইন পার্সন এবং ভার্চুয়াল ক্লাশের মধ্যে পরিবর্তনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রথম দফায় পরিবর্তনের আবেদন বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টা পর্যন্ত গ্রহণ করা হবে।
আগামী ১৩ অক্টোবর থেকে এই পরিবর্তন কার্যকর হবে। বর্তমানে ইন পার্সন এবং অনলাইন লার্নিং মেথড পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং তার স্ত্রী সোফি গ্রেগোয়ার ট্রুডো তাদের বাচ্চাদের স্কুলে দিয়েছেন। ট্রুডোর তিন সন্তান জেভিয়ার, এলা গ্রেস এবং হ্যাড্রিয়েন স্কুলে পড়াশোনা করেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কানাডার স্থানীয় গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
অন্যদিকে কানাডার কনজারভেটিভ দলের নেতা এরিন ওটুল এবং তার স্ত্রী তাদের দুটি সন্তানকে স্কুলে দিয়েছে। ওটুল কানাডার স্থানীয় গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমাদের স্কুলগুলি এবং যে পরিকল্পনাগুলি করা হচ্ছে তার প্রতি আমার অনেক আস্থা রয়েছে।
উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে স্কুলগুলি নিরাপদে খোলা রাখতে সহায়তা করতে ফেডারেল সরকার ২ বিলিয়ন ডলার তহবিল ঘোষণা করেছে।
স্কুল খোলা থাকার কারণে অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক আর শঙ্কা রয়েই গেছে। অনেক অভিভাবকই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের অনেকেই মনে করছেন, পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে স্বাভাবিক হয়ে না আসা পর্যন্ত তাদের সন্তানদেরকে ভার্চুয়াল ক্লাসেই রাখবেন।
তবে বিভিন্ন প্রদেশে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সামাজিক দূরত্ব এবং শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং কর্মচারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য ইতোমধ্যেই নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে স্কুল বোর্ডগুলো। এর মধ্যে শ্রেণিকক্ষে অবাধে বায়ু চলাচলের ব্যবস্থার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে তারা।
সংক্রমণ থেকে বাঁচতে শ্রেণিকক্ষে অবাধে বায়ু চলাচলের ব্যবস্থার উপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
কানাডায় প্রচুর সংখ্যক প্রবাসী বাঙালি অভিভাবকরাও শঙ্কিত। তাদের অনেকেই জানিয়েছেন, সন্তানদের স্কুলে ইন পার্সন দেওয়ার পরিবর্তে ঘরে বসে অনলাইনে ভার্চুয়াল ক্লাসে দিয়েছেন। আবার অনেকেই ক্লাসে দেয়ার বিপক্ষে মত দিয়েছেন।
পুরো কানাডাতেই আতঙ্ক এখনও কাটেনি। ইতোমধ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সকল শ্রেণির মানুষ চেষ্টা করছে যার যার দিক থেকে সতর্ক ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার। তারপরেও প্রতিদিনই প্রায় প্রতিটি প্রদেশে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির খবর পাওয়া যাচ্ছে।
আলবার্টা প্রদেশের ক্যালগেরির আশরাফুর রহমান বলেন, কঠিন এক সময় আমরা অতিক্রম করছি। এর মধ্যে আবার প্রিয় সন্তানদের স্কুল খোলা। একদিকে কর্মময় জীবন আর অন্যদিকে সন্তানদের পরিচর্যা। সব মিলে শঙ্কা এখনও কাটেনি। সামনের দিনগুলি হয়তো আরও ভয়াবহ হবে এই চিন্তা করেই আমার সন্তানদেরকে ভার্চুয়াল অনলাইন ক্লাসে দিয়েছি।
আলবার্টার ক্যালগেরিতে বসবাসরত প্রবাসী বাঙালি ও উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক মাহমুদ হাসান দিপু বলেন, করোনাকালের গত সাত মাসের গৃহবন্দি জীবনে শিশু-কিশোরদের একাডেমিক শিক্ষার চেয়েও মানসিক সমৃদ্ধি ও বিকাশে যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে এর ভবিষ্যৎ প্রভাব নিয়ে আমি ভীষণ শংকিত।
তিনি বলেন, তাই সরকার ও স্কুল কর্তৃপক্ষ করোনা প্রতিরোধের ব্যবস্থা সমূহের প্রতি আস্থা রেখেই সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যদিও সন্তানদের সতর্কতামূলক ব্যবস্থাগুলোর প্রতি আন্তরিকতা নিয়ে পুরোপুরি সন্দিহান হতে পারছি না।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, কানাডায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৫৬ হাজার ৯৬১ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ৯ হাজার ২ শত ৯১ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৩৩ হাজার ৭৩৭ জন।